প্রকাশিত: ১১/০৯/২০১৬ ৭:৪২ এএম

নিবন্ধন ছাড়া আর চালানো যাবে না কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এরই মধ্যে তিন স্তরে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গত ১৬ আগস্ট মহানগর, জেলা ও উপজেলার জন্য আলাদা তিন ধরনের টাস্কফোর্স গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের সব কিন্ডারগার্টেন স্কুল সরেজমিনে পরিদর্শন করে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে এসব টাস্কফোর্স। সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। বিধিমালার শর্ত না মানলে বন্ধ করে দেওয়া হবে কিন্ডারগার্টেন স্কুল।

ন্যূনতম অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা ছাড়াই রাজধানীসহ সারা দেশে যত্রতত্র গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর নিবন্ধনের জন্য সরকার ২০১১ সালে একটি বিধিমালা জারি করলেও কেউ নিবন্ধন নিচ্ছে না। এ অবস্থায় স্কুলগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মো. আনোয়ারুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যত্রতত্র কিন্ডারগার্টেন থাকতে পারবে না। দেখা যায়, একই বাড়িতে বা পাশাপাশি বাড়িতে একাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কোনো সুবিধাই তাদের নেই। এভাবে থাকতে পারে না। বিধিমালা অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে শর্ত মেনে চলতে হবে। এরই মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপরিশ অনুযায়ীই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূলত আমরা এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসব।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, বিভাগীয় ও মহানগরের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সের সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার, সদস্যসচিব হবেন বিভাগীয় পরিচালক এবং সদস্য হবেন ডিআইজি, পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। জেলা টাস্কফোর্সে সভাপতি থাকবেন জেলা প্রশাসক, সদস্যসচিব হবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সদস্য হবেন পুলিশ সুপার, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপপরিচালক, সমাজসেবা। উপজেলা টাস্কফোর্সে সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্যসচিব হবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সদস্য হবেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি।

প্রজ্ঞাপনে এসব টাস্কফোর্সের কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অনুমতি, নিবন্ধনসংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা ও বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীতা নিরূপণ করবে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, ছাত্রছাত্রী ভর্তি, ফি নির্ধারণ ও আদায়, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য পরীক্ষা করবে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের পাঠদান, সহশিক্ষাক্রম (পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম বোঝাতে), আর্থিক কর্মকাণ্ড ও শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভুক্তি যাচাই করবে। সব টাস্কফোর্স এক মাসের মধ্যে করণীয় বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপরিশ মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠাবে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকার ২০১১ সালে নিবন্ধন বিধিমালা জারি করেছিল। আশা করা হয়েছিল, জারি করা বিধিমালার আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধিত ও পরিচালিত হবে। কিন্তু সারা দেশে ওই বিধিমালা উপেক্ষা করে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠেছে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ছাত্রছাত্রী ভর্তি, ভর্তি ফি নির্ধারণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি অনুসৃত হচ্ছে না। অন্যদিকে পাঠ্য তালিকায় বইয়ের আধিক্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় অননুমোদিতভাবে গড়ে ওঠা নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডারগার্টেন প্রতিরোধকল্পে বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী যাচাই করে করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের (বিকপ) সভাপতি মো. ইস্কেন্দার আলী হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১১ সালের বিধিমালা ২০১২ সালে সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে যার যে জমির ওপর স্কুল আছে সেই অনুযায়ীই আবেদনের কথা বলা হয়েছে। আমরাও চাই যেসব স্কুল চালানোর মতো নয় সেগুলো বাতিল করা হয়। সব স্কুল একটা নীতিমালার মধ্যে আসুক। কিন্তু এ জন্য প্রধান কাজ নিবন্ধিত হওয়া। মোটামুটিভাবে একটি স্কুল যদি শর্ত পূরণ করে তাহলে তাদের যেন নিবন্ধন দেওয়া হয়। আর এই নিবন্ধনের জন্য আমরা আরো এক বছর সময় চাই। এরপর যদি এ ধরনের টাস্কফোর্স তাদের কাজ শুরু করে তাহলে আমাদের আপত্তি নেই।’

পাঠকের মতামত

যে কারনে মামলার মুখে পড়তে পারে ইউনিয়ন ব্যাংক

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ এ মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ...